Saturday, February 21, 2009

"Baki" Kotha

'বাকি' কথা

আজকে (২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯, শুক্রবার) আবার বইমেলা গিয়েছি। বেশিক্ষন অবশ্য থাকতে পারিনি; এত মানুষের ভীড়ে যেখানে দম ফেলা যাচ্ছেনা, সেখানে পা ফেলে এক দন্ড বই দেখবো - সে সুযোগ করাই দায়। তার ওপর সব টিভি চ্যানেলগুলো ক্যামেরা নিয়ে মোড়ক উন্মোচন, লেখক-কথন, দর্শনার্থী-কথন ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে; তাদের ঘিরেও মানুষরা জটলা করে আছে। মহিলারা দিব্যি পুরুষদের গুঁতিয়ে জায়গা করে নিতে পারলেও আমার মতো ছা-পোষা লোকের সে সক্ষমতা, সাহস বা ইচ্ছা - কোনোটাই নেই। তাই কিছুক্ষন লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হাঁটাহাঁটি করে (এখানে যা একটু পা ফেলা যাচ্ছিলো; জাফর ইকবালের 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস'-টাও কিনে নিয়েছি হাসি ) যখন বের হতে যাবো, তখন দেখি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্টলটা একটু ফাঁকা আছে। তাই ভেতরে ঢুকে পড়লাম।

বরাবরের মতোই সেই গনহত্যার ছবি, আত্মসমর্পনের ছবি টাঙানো (তবে ছোট যে কয়েকজন ছিল, তারা বেশ আগ্রহের সাথেই দেখছিলো)। এর মধ্যেই দেখলাম, শহীদ বাকীর দু'টো চিঠি টাঙানো, আগে আমি দেখিনি - একটি তাঁর মাকে লেখা ও আরেকটি বন্ধুকে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকার খিলগাঁও-এ যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন।

আমার নানাবাড়ি খিলগাঁও এলাকায়। মামাদের বেশ ভক্ত ছিলাম বলে ছেলেবেলায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া হতো। মালিবাগ বাজার থেকে যে রাস্তাটা পল্লীমা সংসদের মাঠ হয়ে খিলগাঁও রেলক্রসিং-এর দিকে গিয়েছে, সে রাস্তা দিয়ে যখন যেতাম তখন পল্লীমা সংসদের গেটের কাছে একটা সিমেন্টের ফলক দেখতাম; যাতে লেখা - শহীদ বাকি স্মৃতি সড়ক। 'শহীদ' 'স্মৃতি' 'সড়ক' - এ তিনটির অর্থ পরিষ্কার বুঝলেও গন্ডগোল হয়েছিলো 'বাকি' শব্দে। কিছুতেই বুঝতাম না, একটা রাস্তার নাম বাকী কেন! 'বাকি' যে কারো নাম, সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিলো (কাউকে জিজ্ঞেসও করিনি 'পাছে লোকে কিছু বলে' মনে করে)।

মানুষটা শহীদ হবার আগের দিন তার পরিচিত একজনকে শেষ চিঠিটা লিখেছিলো; হাতে হাতে পাঠানো সেই নাতিদীর্ঘ চিঠিতে তিনি যেমন কুশলাদি বিনিময় করেছেন, তেমনি পত্রবাহককে 'নিজের লোক' বলে আশ্বস্তও করেছেন; আবার পত্রবাহকের জন্য কিছু একটা করতেও অনুরোধ করেছেন। আমাকে সবচেয়ে বেশি উদাস করেছে যখন তিনি লিখেছেন যে, পত্রপ্রাপকের সাথে তিনি পরের বুধবারই দেখা করবেন; অনেক কথা নাকি বলার আছে তার সাথে! সেই অনেক কথা তিনি তাঁর সাথেই নিয়ে গেলেন - শহীদ বাকি সেগুলো বাকী রেখে গেলেন।

অনেক আগে 'বহুব্রীহি' নাটকে হুমায়ূন আহমেদ এক অসম্ভব স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাদেশের সবগুলো গ্রামের সবক'জন মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী লিপিবদ্ধ করার স্বপ্ন! একজন মানুষের এক জীবনে সেই কাজ শেষ হবার নয়; তবুও আবুল হায়াত (ওনার চরিত্রের নামটা মনে নেই) সেই কাজে বের হয়ে পড়েছিলেন। সবাই মিলে কি এই কাজ শেষ করা যায়না?

(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)

Tuesday, February 17, 2009

Side Please!

সাইড প্লিজ!


মাত্র জ্ঞান ফিরেছে এমন একজন লোককে জিজ্ঞেস করা হলো - "ভাই, আপনি অ্যাকসিডেন্ট করলেন কী করে?"
"তাতো জানিনা রে ভাই, মনে হয় সাইড দিতে গিয়ে.."
"মানে? ব্যাপারটা খুলে বলুন তো"
"ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। এমন সময় সামনে একজন লোক এসে পড়লো, তখন তাকে সাইড দিলাম। এরপর সামনে রিক্সা চলে এলো, সেটাকেও সাইড দিলাম। তারপর সামনে একটা ব্রিজ এসে পড়লো, দিলাম সাইড! এরপর আর কিছু মনে নাই!"

××××××××××××××××××××××××××

টানা ৩ দিনের কোনো এক ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম যমুনা সেতুর লাগোয়া যমুনা রিসোর্টে। বাংলোটাইপ ১৪/১৫ টা বাড়ি আর বাগান, রেস্তোরা, সুইমিংপুল, মিউজিয়াম, কনফারেন্স রুম ইত্যাদি মিলিয়ে খুব সুন্দর করে তৈরী করা একটা জায়গা (গলাকাটা বিল পরিশোধ করতে হয়)। সময়টা ছিলো ঘূর্ণিঝড় 'রেশমী'-র; সারাদেশে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। তাতে যেন যমুনার রূপ আরো খোলতাই হয়ে উঠেছে।

রিসোর্ট থেকে যেদিন ফিরব (তখনো বৃষ্টি চলছে) সেদিন খবর পেলাম, পিচ্ছিল হাইওয়ের কারনে সমস্ত দূরপাল্লার বাস কোম্পানি তাদের ট্রিপের সংখ্যা অর্ধেক করে ফেলেছে। সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটের মাঝপথে যমুনা রিসোর্ট থেকে বাসে উঠবো বলে আমাদের সবাই তাই খালি সিট পাবে না। পথিমথ্যে কেউ নেমে গেলে তখন সিট পাওয়া যাবে।

সিট না পেয়ে আমার জায়গা হলো ড্রাইভারের পাশে বাসের ইঞ্জিনের ওপর। বসতে অসুবিধা হলেও জায়গাটা আমার পছন্দ হলো; কারন, এখানে বসে সামনে রাস্তা আর তার আশেপাশের সবকিছু বিনাবাধায় দেখা যায়। তার ওপর বৃষ্টির কারনে চারদিকে একটা সতেজ ভাব - রাস্তাগুলো একদম পরিষ্কার, ধূলাবালির চিহ্ণও নেই, হাইওয়ের দু'পাশে ফ্যাকাসে দেখতে যে গাছপালা থাকে, সেগুলোও যেন ঈদের নতুন সবুজ আর গাঢ় বাদামী পোশাক পরে আছে! আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারনে রাস্তায় লোকজনও কম। শুধু কিছুক্ষন পর পর অন্য বাস, ট্রাক কিংবা লোকাল বেবিট্যাক্সি বা রিক্সা দেখা যাচ্ছে।

"ওস্তাদ, সামনে বেবি!"
- আমার বাম পাশে বাসের হেল্পার, ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল। তাকিয়ে দেখি, আসলেই কিছু দূরে রাজধানী হতে বিতাড়িত একটা হলুদ-কালো বেবিট্যাক্সি রাস্তার মাঝখান দিয়ে ভটভট করে চলছে। খুব সমীহের সাথে সে আমাদের বাসকে ওভারটেক করার জায়গা ছেড়ে দিলো। কতক্ষন পরে হেল্পার আবার চ্যাঁচায় - " সামনে সোনারগাঁও।" এ্যাঁ, বলে কি! এখানে সোনারগাঁ কোথায়? লক্ষ্য করে দেখি, সামনে সোনারগাঁও কোম্পানির একটা বাস যাচ্ছে। কি ব্যাপার! এত বড় বাসটাও কি ড্রাইভার দেখে না?

ঢাকার লোকাল বাসের হেল্পাররা ট্রাফিক জ্যামের সময় এরকম ধারাভাষ্যে ড্রাইভারদের রাস্তার হাল-হকিকত জানায়, যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই ফাঁকা রাস্তায় এসব রানিং কমেন্ট্রির দরকার কী? ড্রাইভারের দিকে তাকালাম - প্রৌঢ় একজন মানুষ; দেখে নেশাখোর বা ঘুমকাতুরেও মনে হচ্ছে না। দৃষ্টিও তো সোজা রাস্তার দিকে! এরই মধ্যে ব্যাটা হেল্পার চেঁচিয়ে যাচ্ছে - "ওস্তাদ, সামনে রিক্সা" কিংবা "সামনে মাইক্রো!" ড্রাইভারও একে একে সবাইকে পাশ কেটে পার হয়ে যাচ্ছে।

কতক্ষন পরে আবার - "ওস্তাদ, সামনে ডাইনে মোড়, উল্টাদিকে টেরাক আছে" ঠিকই সামনে রাস্তা ডানে মোড় নিয়েছে এবং উল্টোদিকে একটা ৫x৫=২৫ টনি ট্রাকও দেখা যাচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর হেল্পারকে জিজ্ঞেস করি - "কি ব্যাপার! ড্রাইভার সাহেবকে এতসব বলতে হয় কেন?" তার সোজা-সাপ্টা জবাব - "সারাক্ষনই তো বইস্যা রাস্তার দিকে তাকায়া থাকে; মাথায় কতকিছু চিন্তা চইল্যা আসে, তাই আওয়াজ দিই!" যুক্তিটা মন্দ না; তবুও কেমন জানি ভয় ভয় লাগে।

এভাবে ড্রাইভার একের পর এক বিভিন্ন যানবাহন, কতগুলো স্পিডব্রেকার আর অনেকগুলো ডানে-বামে মোড় পার হয়ে এলো। আস্তে আস্তে সময় কেটে যায়, আমার চোখ ঢুলু ঢুলু হয়ে আসে। একটু ঝিমোচ্ছিলাম, এমন সময় হেল্পার চিৎকার করে ওঠে -

"ওস্তাদ, সামনে ব্রিজ!!!"

(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)

যমুনা রিসোর্টে তোলা দু'টো ছবি (মেঘের অনেক রং -আপা'র অনুরোধে দেয়া)
Photobucket
Photobucket

Friday, February 6, 2009

Ektu Haowa Onek Dhuloy

একটু হাওয়া অনেক ধূলোয়
-------------------------------

"কি রে, তোর পরীক্ষার রেজাল্ট বাইর হইছে?"
"হ্যা"
"ফার্স্ট হইছস?"
"না"
"ক্যান? যে ফার্স্ট হইছে, তার কি দুইটা মাথা, নাকি হাত-পা তিনটা?"

আমি নিরুত্তর থাকতাম; এই কথার কী জবাব দিবো? পাশে আমার ছোট খালা, কিংবা কখনো আমার নানু হেসে উঠতেন। নানুভাই-এর কথা আমার মনে পড়লে সবার আগে এই স্মৃতিটা চলে আসে। আরেকটা মনে পড়ে এরকম - নানুভাই তার পুরোনো বাড়ির কলতলায় একটা এলুমিনিয়ামের গামলা সামনে নিয়ে টুল পেতে আরাম করে বসে আছেন; গামলাতে অল্প পানি নেয়া যাতে পায়ের আঙ্গুলগুলো ডুবে থাকে। সে পানিতে পা ডুবিয়ে নখ নরম করা হচ্ছে, এরপর সেই নখে নেইল-কাটার ধরানো যাবে!

নানা-নাতির যে একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক থাকে, সেটা তেমন একটা নানুভাই-এর সাথে আমার ছিলনা, একান্নবর্তী পরিবার নাহলে যেমন হয়। তবে ছোটকালে প্রায়ই নানাবাড়ি যেতাম (ঢাকাতেই), মামাদের জিনিসপত্র ঘাঁটতাম (যেগুলো তখন আমার জন্য রহস্যময় জিনিস মনে হতো) কিংবা ভিসিআরে ক্যাসেট লাগিয়ে বিশাল টিভি-পর্দায় হিন্দী সিনেমা দেখতাম; কিন্তু নানুভাই-এর পেছনে ঘুরঘুর করতাম না, যদি আবার বেকায়দায় প্রশ্ন করে বিপদে ফেলে! শুধু খাওয়ার সময় দেখা যেত, আমরা এক দলের মানুষ - দু'জনেই নরম ভাত পছন্দ করতাম যে! আবার নানু পছন্দ করত একটু শক্ত শক্ত ভাত। যেহেতু রান্নাঘর ওনার দখলে, তাই আমরা শক্ত ভাত চিবোতাম আর হা-হুতাশ করতাম। এই খাওয়ার টেবিলেই নানুভাই শিখিয়ে দিলেন, মাংশ নয়, গোশত বল্ । নানুভাই বুন্দিয়া খেতে পছন্দ করতেন (আসলে মিষ্টি তাঁর প্রিয় ছিলো)। আমাদের বাসার কাছে যে হোটেলটা ছিল, সেটার বুন্দিয়া ওনার এক নাম্বার ফেবারিট; বহুবার এমন হয়েছে যে, নানুভাই আমাদের বাসায় এলেন, আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করলাম - "হঠাৎ এখানে?", ওনার জবাব - "বুন্দিয়া নিতে আসছি, ভাবলাম একটু দেখা কইরা যাই!"

ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হবার পর একদিন নানাবাড়ি যাওয়ার পর নানুভাই বললেন, "তোদের কোনো কাজকাম শিখানো শুরু করছে?" "না, এখনো তো শুধু থিওরি, ডেন্টালের কাজ সব ফাইনাল ইয়ারে"
নানুভাই বললেন - "দ্যাখ তো. এটা ঠিক করা যায় ক্যামনে?", এই বলে উনি উপরের পাটির আলগা দাঁতের পুরো সেট দেখালেন, মাঝখান দিয়ে একেবারে দুইভাগ!

তাঁকে নামাজ-কালাম মিস দিতে দেখিনি কখনো; কোথায় কী দোয়া-দরূদ পড়তে হয়, তাও জানতেন বেশ। একবার জিজ্ঞেস করলেন, "বল্ তো, যানবাহনে চড়ার দোয়া কী?" আমার জবাব শুনে বললেন - "এটা তো নৌকায় চড়ার দোয়া!" নানাবাড়িতে রাতে শোবার আগে দেখতাম, রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে চারদিকে তাক করে নানারকম দোয়া পড়তেন। এই দৃশ্য এখনো আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে।

ছোটকালে ওনার দাঁড়ির স্টাইলটা আমার কাছে পুরো রহস্যময় ছিল; গোঁফটা স্বাভাবিক হলেও দাঁড়িটা জানি কেমন! যেন গোঁফটাই দাঁড়ি হয়ে ঝুলে আছে, পরে জেনেছি, একে বলে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি।

বেঁচেছিলেন অনেকদিন, তাই মৃত্যুটাও হলো আকস্মিক; তবে তা হলো যন্ত্রনাহীন। আমার ছোট্ট জীবনে কাছ থেকে মৃত্যুর ঘটনা এর আগে দেখছিলাম একবারই; সামনে হয়তো আরো দেখবো।

Wednesday, February 4, 2009

Kolponai Dosh Ki 01 - Durvaggo

[কতজনে কতবিষয়ে কতকিছু লিখে চলেছে... শুধু আমিই কিছু লিখতে পারিনা, কী নিয়ে লিখবো তাই খুঁজে পাইনা; এমন কোনো চমকপ্রদ অভিজ্ঞতাও নেই যে সেটা নিয়ে লিখবো। তার ওপর রয়েছে কল্পনাশক্তির অভাব... ভেবে ভেবে ঠিক করলাম, চারপাশে নিরস যা কিছু দেখবো তার মধ্যেই মশলা-পাতি চড়িয়ে লিখতে থাকি। দেখি, কি হয়!]

কল্পনায় দোষ কী

দুর্ভাগ্য
------


"এই, তুমি কোথায় গিয়েছিলে বলতো?"
"কোথায় আবার! খাবার আনতে।"
"সত্যিই তো? নাকি অন্য কারো সাথে...."
"... কী বলছো! এইযে দেখো, খাবার। কি করে এই কথা ভাবলে তুমি! তুমি জানো না, একসাথে থাকাই আমাদের নিয়তি?"
"তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, শুধু নিয়তির কারনেই তুমি আমার সাথে সংসার করছো!"
"আজ তোমার কী হলো বলতো?"
"দেখো, ঐ লোকটা অনেকক্ষন ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খুব খারাপ লাগছে"
"কোন লোকটা?"
"আমাদের কিন্তু সবসময় একসাথে থাকার কথা, তুমিই না নিয়তির কথা বললে?"
"তাইতো বললাম!"
"তাহলে খাবার আনতে আমাকেও নিলে না কেন? জোড়াবেঁধে একসাথে যেতাম আর আসতাম।"
"আচ্ছা, ঐ লোকটার কি কিছু হয়েছে? অসুখ, কিংবা বিপদ?"
"দেখে তো মনে হচ্ছে না। ঐযে দেখো, ঐ তিন তলার বারান্দায়"
"সর্বনাশ! ওটা তো হাসপাতাল। নিশ্চয়ই ওর কিছু হয়েছে, নাহয় ওর কোনো আত্মীয়ের"
"সব তোমার দোষ, কেন আমাকে একা ফেলে গেলে? এখন যদি লোকটার কোনো ক্ষতি হয়?"
"তাহলে কী করবো! ক্ষিদে লাগলে তো তুমিই আগে খ্যান খ্যান শুরু করে দেও।"
"কী! আমি খ্যান খ্যান করি! যাও, তোমার সাথে কথা নাই!"
"না বল কথা; আমার কি!"

- এই বলে পুরুষ শালিকটা গাছের মগডালে উড়ে পূর্ব দুকে মুখ করে বসে রইল। আর স্ত্রী শালিকটা একটা নিচু ডালে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে রইলো।

আর হাসপাতালের তিন তলার বরান্দায় দাঁড়িয়ে আমি এই দু'টো শালিকের বিরহ দৃশ্য দেখতে লাগলাম।

(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)

Friday, January 30, 2009

AC Bus-er Beshi Bipod

এসি বাসের বেশী বিপদ


ঘাড় শক্ত করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি, হাত দু'টো পেটের ওপর রাখা; ঠিক পেট নয়, আসলে বেল্টের ওপর রাখা। পুরো শরীর কাঠ হয়ে আছে! বাসটা যখনই ঝাকুনি দিচ্ছে, প্রাণপণে ঢোঁক গিলে ভেতরের জিনিস ভেতরেই ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেকেউ দেখলেই বুঝতে পারবে- এই পাবলিক, বাসে উঠলে 'সেইরকম' হয়ে যায়!

অথচ ঘটনা কিন্তু সবসময় এরকম নয়। আমি ঢাকার রাস্তায় 'লোকাল'-এ চড়া পাবলিক; ইদানিং অবশ্য বড় বড় সিটিং বাসে চড়ে বড় বড় ভাব দেখানোর চেষ্টা করি। দাঁড়িয়ে-বসে, এমনকি সিট খালি পেলে পা তুলে আধশোয়া হয়ে বাস চড়তেও আমার কোনো বিকার নেই। হাই জাম্প দিক, আর লংজাম্প - 'ফিনিক্স'-এর গতিতে দৌড়াক, আর 'ফেরারী'-র মতো হার্ড ব্রেক করুক - বাসে আমার রেকর্ড একদম 'নিট এন্ড ক্লিন'; নো পলিথিন বিজনেস উইথ মি!

যত সমস্যা হয় এই এসি বাসে উঠলে। বদ্ধ, গুমোট জায়গায় অর্ধেক দম বের হয়, আর বাকীটা শ্বাসনালীর বদলে খাদ্যনালী দিয়ে ব্যাক করে; তখনই শুরু হয়ে যায় 'খাইবারের যুদ্ধ'। তার উপর এমন সব বিদঘুটে বায়ু সতেজকারী (এয়ার ফ্রেশনার) স্প্রে করে যে পেটের মধ্যে যা কিছু আছে ডিগবাজী খেয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। বাসে ওঠার আগে 'এভোমিন' খেয়ে নিয়েছিলাম; মনে হচ্ছে, সেই বেচারাই এখন এই উল্টো হাঁটার নেতৃত্ব দিচ্ছে!

চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। এই এক কাজে আমি বলতে গেলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু যতবারই চোখটা লেগে আসে, অমনি বাসটা রাস্তার সাথে এক জোট হয়ে একটা ঝাকুনি মেরে ওঠে। আর যায় কোথায়, ভূড়ির ভেতর সব আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। প্রায় নতুন বাস। সিটের ভেতরে কিসব ম্যাসাজের ব্যবস্থা রেখেছে; কেমন কে জানে? দিলাম সুইচ টিপে। অদৃশ্য কে যেন পিঠের মধ্যে কিল মারা শুরু করল। আহা, কী সেই কিল! কিল খেয়েই আমি মেসেজ পেয়ে গেলাম। কথায় আছে - পেটে খেলে পিঠে সয়। পেট নিয়েই পারছিনা, আবার পিঠে খাবো!

পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, আধা ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যাত্রার প্রায় ঘন্টা ছুঁই ছুঁই, কিছুই তো ঠিক হচ্ছে না। ঘটনা কী?

ঘটনা গুরুতর! কিছুক্ষন আগে বাস কোম্পানির দেয়া শুভেচ্ছা বোতলের মিনারেল ওয়াটার খেয়েছিলাম। বজ্জাত পানির যে অশুভ ইচ্ছা ছিল, কে জানত? আমার তৃষ্ণা না মিটিয়ে সেই পানি খাদ্যনালী 'অয়েলিং' করতে করতে গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত নেমেছে। এমন 'স্মুদ' পথ পেয়ে পেটটা আর শান্ত হতে চাচ্ছেই না।

ঘটনা কদ্দূর এগোত, কে জানে; আমি কয়েক টুকরো সুপারী খেয়ে ফেললাম (আমার মা জননীকে ধন্যবাদ। উনি এ লাইনে 'প্রো'; রেকর্ডও নিট এন্ড ক্লিন নয়) সম্ভবত কাজ হলো; সাথী পেয়ে 'এভোমিন'ও মনে হয় ভরসা পেলো। কিছুক্ষন পর আমিও শান্তি পেলাম। আর কি! বিনা নোটিশে ঘুম!


(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)


Friday, October 10, 2008

Siddiki-r Sid Kete

সিদ্দিকীর সিঁদ কেটে

বাংলাদেশ জিতেছে। সাম্প্রতিক সময়ের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমাদের ক্রিকেট টিম নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। আগামীকালের (১০.১০.০৮) সংবাদপত্রগুলোতে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সুললিত সাহিত্যিক ভাষায় জুনায়েদ-আশরাফুল-মাশরাফির বন্দনা ছাপা হবে, কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে আমার মতো কীটাসাংবাদিকের (কীট+অসাংবাদিক) আর কিছু না বলাই ভালো। বরং অন্য কথা বলি।

জুনায়েদ সিদ্দিকীর খেলা দেখলাম; শুরুর দিকে অবশ্য দেখতে পারিনি, যখন টিভির সামনে বসি তখন জুনায়েদের রান ২৮ বলে ১১ - তামিম আউট। রহিমকে নিয়ে ছেলেটা ঢিমেতালে খেলে যাচ্ছে। তা যাক - রাণীক্ষেত মড়ক না লাগলেই হলো। বাংলাদেশের ইনিংসটা যখন শুরুর ফাস্ট বোলারদের পার হয়ে স্লো আর স্পিন বোলিংয়ের অংশে ঢুকল তখন জুনায়েদের একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগলো - ছেলেটা নিয়মিত সিঙ্গেল রান তুলে রানের গতি চালু রাখছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটসম্যান এই জিনিসটা পারেনা (বা পারতে চায়না), তাদের মনে হয় ধারনা, শুধু চার-ছক্কাতেই দ্রুত রান ওঠে। অবশ্য কাপালী, সাকিব আর হালের রকিবুলকে এর বাইরে রাখতে আমার আপত্তি নেই।

ক্রিকেট খেলা যখন থেকে বুঝি, সেই থেকে আজ পর্যন্ত, আমার মতে, ক্রিকেটে ৩টি রেভোলুশন এসেছে - এক, জন্টি রোডসের ফিল্ডিং; দুই, জয়সুরিয়া-কালুভিথারানার পিঞ্চ হিটিং; আর তিন, মাইকেল বেভানের সিঙ্গেলস। অষ্ট্রেলিয়ার মাইকেল বেভানের কথা বলি। তার খেলা দেখতে যতই বিরক্তিকর লাগুক, সেই কিন্তু প্রথম দেখিয়েছে শুধু সিঙ্গেলস নিয়েও ম্যাচ জেতা যায়। ২৫০/২৬০ তুলতে অযথা মারামরি না করে এক/দুই করেও এই রান তোলা যায়। আর যদি টার্গেট বেশি হয়, তখন নাহয় একটু মারামারি কর - খারাপ বল তো আসবেই। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক যেমন করেই মাঠ সাজাক না কেন, ফাঁক ফোকর তো থাকবেই। তাহলে ৬ বলে ৬টা ১ রান তুলতে অসুবিধা কোথায়! এমনও দেখেছি, স্কোরবোর্ডে লেখা - মাইকেল বেভান, ৪৩ বলে ৪৯ রান, চার - ১, ছয় - ০... কী আশ্চর্য!

সেখান থেকে শুরু। এখন তো বড়-মাঝারী খেলোয়াড়রাও ইনিসের মাঝে এসে সিঙ্গেলসই নেয়; কী দরকার ঝুকি নিয়ে আউট হবার! মনে আছে, '৯২-এর বিশ্বকাপে কোনো এক খেলায় ইমরান খান বেহুদা ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলো। গ্যালারিতে কোনো এক রসিক কার্টুন এঁকে ফেলল, ইমরান নিজেকে নিজেই ছক্কা মেরে মাঠের বাইরে!

খালি বাংলাদেশই শিখলো না। প্রতিবার দেখি, ইনিংসের মাঝে স্পিন কিংবা স্লো বোলাররা এলেই ব্যাটসম্যানরা হয় মারতে যায়, (ইমরান খানের মতো হলে) আর নাহয় ঠেকায় - মাঝে মাঝে যাও বা শট খেলে, বেশিরভাগই ফিল্ডারের দিকে চলে যায় আর নাহয় ব্যাটের কানায়কুনায় লেগে এক/দুই হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অলক কাপালীর ৯৩ বলে ৮৯ রানের সেই ইনিংস (কত সালে মনে নেই) দেখে মনে হলো, নাহ! বাংলাদেশও শিখছে।

কিন্তু কোথায়? আর তো কেউ পারছে না। মাঝখানে কার্ডিফে অষ্ট্রেলিয়াকে হারানোর সেই খেলায় আশরাফুল-বাশার জুটিতে সেই সিঙ্গেলস নেয়ার কারিশমা দেখেছিলাম। বিশ্বকাপে ভারত-বধেও তার ছিটেফোঁটা ছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ইদানিং অবশ্য দেখি, সাকিব আর রকিবুল যখন জুটি বাঁধে তখন রান ভালোই এগোতে থাকে। এখানে বলে রাখি, ক্রিজের দু'পাশেই যদি রান তোলায় চটপটে ব্যাটসম্যান না থাকে, তাহলে এক সাকিব বা এক রকিবুলও দ্রুত রান নিতে পারবে না। জুনায়েদ আর বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো, আশরাফুল আজকে মাথা গরম করেনি।

কিন্তু ভাগ্যের ওপর আর কতদিন?

Friday, October 3, 2008

Kolponar Onuvuti

[বহু বছর আগে, স্কুলে যখন পড়তাম তখন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম.... কোনো এক দূর দেশের ছোট্ট এক গ্রামে ছোট্ট আমি অনেক ভাই-বোনদের সাথে থাকতাম। কোনো এক অজ্ঞাত কারনে আমরা সবাই একেকদিকে ছিটকে পড়লাম। ন্বপ্নে সবই সম্ভব... তাই নিমেষে বড় হয়ে উঠলাম। একদিন রাস্তায় চলতে চলতে কোনো এক পরিচিত মুখ চোখে পড়ে যায়; হয়ত কোনো বোনের মুখ (এখন আর মনে নেই)। তাকে খুঁজে পেয়ে অন্যদেরও খুঁজে পেলাম (স্বপ্নের লীলাখেলা...)। 

এরপর আমাদের সে কি কান্না!!.... সেদিন সকালে আমার বালিশের একপাশ সম্পূর্ন ভিজে গিয়েছিল... ]

কল্পনার অনুভূতি

ক্ষনিকের কল্পনায় এসেছিলে তোমরা 
আদিম এক ভালোবাসা নিয়ে। 
কখনো সূর্য, কখনো মেঘরাশি, 
কখনো ঝড় নিয়েছিল ভাসিয়ে 

তবু হেসেছিলাম কল্পনায় 
হয়তো বাস্তবেও... 

হৃদয়ের টান কোথা হতে আসে? 
প্রকৃতি, একি খেলা তোমার! 
নিঃসঙ্গ অলসতায় বুকে টান লাগে - 
হয়ত কাল্পনিক তোমাদের, হয়ত বাস্তব আমার। 

তবু সুখ পেয়েছিলাম কল্পনায় 
হয়তো বাস্তবেও... 

স্মৃতি মলিন হয়; এইতো নিয়ম 
অনুভূতি থেকে যায় প্রখর - 
অপেক্ষার কষ্ট, মিলনের আনন্দ; 
অশ্রু বয়ে যায় অঝর! 

কেঁদেছিলাম সেদিন কল্পনায় 
... এবং বাস্তবেও।