Saturday, February 21, 2009

"Baki" Kotha

'বাকি' কথা

আজকে (২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯, শুক্রবার) আবার বইমেলা গিয়েছি। বেশিক্ষন অবশ্য থাকতে পারিনি; এত মানুষের ভীড়ে যেখানে দম ফেলা যাচ্ছেনা, সেখানে পা ফেলে এক দন্ড বই দেখবো - সে সুযোগ করাই দায়। তার ওপর সব টিভি চ্যানেলগুলো ক্যামেরা নিয়ে মোড়ক উন্মোচন, লেখক-কথন, দর্শনার্থী-কথন ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে; তাদের ঘিরেও মানুষরা জটলা করে আছে। মহিলারা দিব্যি পুরুষদের গুঁতিয়ে জায়গা করে নিতে পারলেও আমার মতো ছা-পোষা লোকের সে সক্ষমতা, সাহস বা ইচ্ছা - কোনোটাই নেই। তাই কিছুক্ষন লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হাঁটাহাঁটি করে (এখানে যা একটু পা ফেলা যাচ্ছিলো; জাফর ইকবালের 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস'-টাও কিনে নিয়েছি হাসি ) যখন বের হতে যাবো, তখন দেখি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্টলটা একটু ফাঁকা আছে। তাই ভেতরে ঢুকে পড়লাম।

বরাবরের মতোই সেই গনহত্যার ছবি, আত্মসমর্পনের ছবি টাঙানো (তবে ছোট যে কয়েকজন ছিল, তারা বেশ আগ্রহের সাথেই দেখছিলো)। এর মধ্যেই দেখলাম, শহীদ বাকীর দু'টো চিঠি টাঙানো, আগে আমি দেখিনি - একটি তাঁর মাকে লেখা ও আরেকটি বন্ধুকে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকার খিলগাঁও-এ যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন।

আমার নানাবাড়ি খিলগাঁও এলাকায়। মামাদের বেশ ভক্ত ছিলাম বলে ছেলেবেলায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া হতো। মালিবাগ বাজার থেকে যে রাস্তাটা পল্লীমা সংসদের মাঠ হয়ে খিলগাঁও রেলক্রসিং-এর দিকে গিয়েছে, সে রাস্তা দিয়ে যখন যেতাম তখন পল্লীমা সংসদের গেটের কাছে একটা সিমেন্টের ফলক দেখতাম; যাতে লেখা - শহীদ বাকি স্মৃতি সড়ক। 'শহীদ' 'স্মৃতি' 'সড়ক' - এ তিনটির অর্থ পরিষ্কার বুঝলেও গন্ডগোল হয়েছিলো 'বাকি' শব্দে। কিছুতেই বুঝতাম না, একটা রাস্তার নাম বাকী কেন! 'বাকি' যে কারো নাম, সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিলো (কাউকে জিজ্ঞেসও করিনি 'পাছে লোকে কিছু বলে' মনে করে)।

মানুষটা শহীদ হবার আগের দিন তার পরিচিত একজনকে শেষ চিঠিটা লিখেছিলো; হাতে হাতে পাঠানো সেই নাতিদীর্ঘ চিঠিতে তিনি যেমন কুশলাদি বিনিময় করেছেন, তেমনি পত্রবাহককে 'নিজের লোক' বলে আশ্বস্তও করেছেন; আবার পত্রবাহকের জন্য কিছু একটা করতেও অনুরোধ করেছেন। আমাকে সবচেয়ে বেশি উদাস করেছে যখন তিনি লিখেছেন যে, পত্রপ্রাপকের সাথে তিনি পরের বুধবারই দেখা করবেন; অনেক কথা নাকি বলার আছে তার সাথে! সেই অনেক কথা তিনি তাঁর সাথেই নিয়ে গেলেন - শহীদ বাকি সেগুলো বাকী রেখে গেলেন।

অনেক আগে 'বহুব্রীহি' নাটকে হুমায়ূন আহমেদ এক অসম্ভব স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাদেশের সবগুলো গ্রামের সবক'জন মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী লিপিবদ্ধ করার স্বপ্ন! একজন মানুষের এক জীবনে সেই কাজ শেষ হবার নয়; তবুও আবুল হায়াত (ওনার চরিত্রের নামটা মনে নেই) সেই কাজে বের হয়ে পড়েছিলেন। সবাই মিলে কি এই কাজ শেষ করা যায়না?

(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)

4 comments:

বরফ পানি said...

অনেকদিন ব্লগ লিখেননা। কেন?

বৃষ্টি বিলাসিনি said...

notun likha r paina keno?

যাযাবর said...

সেই কাজ শেষ করা যায় ভাইয়া, কিন্তু মানুষ সব বিভিন্ন ধরনের 'রাজনীতি' নিয়ে ব্যস্ত; এমন গঠনমুখী কাজের মানুষ কই?! :(

বৃষ্টি বিলাসিনি said...

et shokto ekta kolom bondho keno?