Friday, February 6, 2009

Ektu Haowa Onek Dhuloy

একটু হাওয়া অনেক ধূলোয়
-------------------------------

"কি রে, তোর পরীক্ষার রেজাল্ট বাইর হইছে?"
"হ্যা"
"ফার্স্ট হইছস?"
"না"
"ক্যান? যে ফার্স্ট হইছে, তার কি দুইটা মাথা, নাকি হাত-পা তিনটা?"

আমি নিরুত্তর থাকতাম; এই কথার কী জবাব দিবো? পাশে আমার ছোট খালা, কিংবা কখনো আমার নানু হেসে উঠতেন। নানুভাই-এর কথা আমার মনে পড়লে সবার আগে এই স্মৃতিটা চলে আসে। আরেকটা মনে পড়ে এরকম - নানুভাই তার পুরোনো বাড়ির কলতলায় একটা এলুমিনিয়ামের গামলা সামনে নিয়ে টুল পেতে আরাম করে বসে আছেন; গামলাতে অল্প পানি নেয়া যাতে পায়ের আঙ্গুলগুলো ডুবে থাকে। সে পানিতে পা ডুবিয়ে নখ নরম করা হচ্ছে, এরপর সেই নখে নেইল-কাটার ধরানো যাবে!

নানা-নাতির যে একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক থাকে, সেটা তেমন একটা নানুভাই-এর সাথে আমার ছিলনা, একান্নবর্তী পরিবার নাহলে যেমন হয়। তবে ছোটকালে প্রায়ই নানাবাড়ি যেতাম (ঢাকাতেই), মামাদের জিনিসপত্র ঘাঁটতাম (যেগুলো তখন আমার জন্য রহস্যময় জিনিস মনে হতো) কিংবা ভিসিআরে ক্যাসেট লাগিয়ে বিশাল টিভি-পর্দায় হিন্দী সিনেমা দেখতাম; কিন্তু নানুভাই-এর পেছনে ঘুরঘুর করতাম না, যদি আবার বেকায়দায় প্রশ্ন করে বিপদে ফেলে! শুধু খাওয়ার সময় দেখা যেত, আমরা এক দলের মানুষ - দু'জনেই নরম ভাত পছন্দ করতাম যে! আবার নানু পছন্দ করত একটু শক্ত শক্ত ভাত। যেহেতু রান্নাঘর ওনার দখলে, তাই আমরা শক্ত ভাত চিবোতাম আর হা-হুতাশ করতাম। এই খাওয়ার টেবিলেই নানুভাই শিখিয়ে দিলেন, মাংশ নয়, গোশত বল্ । নানুভাই বুন্দিয়া খেতে পছন্দ করতেন (আসলে মিষ্টি তাঁর প্রিয় ছিলো)। আমাদের বাসার কাছে যে হোটেলটা ছিল, সেটার বুন্দিয়া ওনার এক নাম্বার ফেবারিট; বহুবার এমন হয়েছে যে, নানুভাই আমাদের বাসায় এলেন, আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করলাম - "হঠাৎ এখানে?", ওনার জবাব - "বুন্দিয়া নিতে আসছি, ভাবলাম একটু দেখা কইরা যাই!"

ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হবার পর একদিন নানাবাড়ি যাওয়ার পর নানুভাই বললেন, "তোদের কোনো কাজকাম শিখানো শুরু করছে?" "না, এখনো তো শুধু থিওরি, ডেন্টালের কাজ সব ফাইনাল ইয়ারে"
নানুভাই বললেন - "দ্যাখ তো. এটা ঠিক করা যায় ক্যামনে?", এই বলে উনি উপরের পাটির আলগা দাঁতের পুরো সেট দেখালেন, মাঝখান দিয়ে একেবারে দুইভাগ!

তাঁকে নামাজ-কালাম মিস দিতে দেখিনি কখনো; কোথায় কী দোয়া-দরূদ পড়তে হয়, তাও জানতেন বেশ। একবার জিজ্ঞেস করলেন, "বল্ তো, যানবাহনে চড়ার দোয়া কী?" আমার জবাব শুনে বললেন - "এটা তো নৌকায় চড়ার দোয়া!" নানাবাড়িতে রাতে শোবার আগে দেখতাম, রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে চারদিকে তাক করে নানারকম দোয়া পড়তেন। এই দৃশ্য এখনো আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে।

ছোটকালে ওনার দাঁড়ির স্টাইলটা আমার কাছে পুরো রহস্যময় ছিল; গোঁফটা স্বাভাবিক হলেও দাঁড়িটা জানি কেমন! যেন গোঁফটাই দাঁড়ি হয়ে ঝুলে আছে, পরে জেনেছি, একে বলে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি।

বেঁচেছিলেন অনেকদিন, তাই মৃত্যুটাও হলো আকস্মিক; তবে তা হলো যন্ত্রনাহীন। আমার ছোট্ট জীবনে কাছ থেকে মৃত্যুর ঘটনা এর আগে দেখছিলাম একবারই; সামনে হয়তো আরো দেখবো।

4 comments:

~ মেঘের অনেক রং ~ said...

tomar Nanu Bhai ke niye sriti charon ta pore vhalo legeche.
amito vhabtam tumi choto belateo ekhonkar moto kothay potu chile...:)
kintu emon shanto shubod balok hoye chile tato vhabini...

Shakil Mahmood said...

আমি কখনই কথায় পটু ছিলাম না; ছেলেবেলায় দুষ্টুমিতে ফ্যামিলি রেকর্ড করেছিলাম, কিন্তু কথাবার্তায় আমি টিউবলাইট ছিলাম (এখনো আছি)...

যাযাবর said...

......... এত সহজ করে, এত সুন্দর করে লিখেছেন...

Shakil Mahmood said...

সহজ করেই লেখার চেষ্টা করি; আমার ভান্ডারে বাংলা শব্দের লজ্জাজনক কমতি রয়েছে!!! তবে 'সুন্দর'-এর ব্যাপারটা পুরো আপনার হাতে। তাতে জিপি ৫.০ পাওয়াতে আমি যারপরনাই আনন্দিত!!!