Friday, January 30, 2009

AC Bus-er Beshi Bipod

এসি বাসের বেশী বিপদ


ঘাড় শক্ত করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি, হাত দু'টো পেটের ওপর রাখা; ঠিক পেট নয়, আসলে বেল্টের ওপর রাখা। পুরো শরীর কাঠ হয়ে আছে! বাসটা যখনই ঝাকুনি দিচ্ছে, প্রাণপণে ঢোঁক গিলে ভেতরের জিনিস ভেতরেই ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেকেউ দেখলেই বুঝতে পারবে- এই পাবলিক, বাসে উঠলে 'সেইরকম' হয়ে যায়!

অথচ ঘটনা কিন্তু সবসময় এরকম নয়। আমি ঢাকার রাস্তায় 'লোকাল'-এ চড়া পাবলিক; ইদানিং অবশ্য বড় বড় সিটিং বাসে চড়ে বড় বড় ভাব দেখানোর চেষ্টা করি। দাঁড়িয়ে-বসে, এমনকি সিট খালি পেলে পা তুলে আধশোয়া হয়ে বাস চড়তেও আমার কোনো বিকার নেই। হাই জাম্প দিক, আর লংজাম্প - 'ফিনিক্স'-এর গতিতে দৌড়াক, আর 'ফেরারী'-র মতো হার্ড ব্রেক করুক - বাসে আমার রেকর্ড একদম 'নিট এন্ড ক্লিন'; নো পলিথিন বিজনেস উইথ মি!

যত সমস্যা হয় এই এসি বাসে উঠলে। বদ্ধ, গুমোট জায়গায় অর্ধেক দম বের হয়, আর বাকীটা শ্বাসনালীর বদলে খাদ্যনালী দিয়ে ব্যাক করে; তখনই শুরু হয়ে যায় 'খাইবারের যুদ্ধ'। তার উপর এমন সব বিদঘুটে বায়ু সতেজকারী (এয়ার ফ্রেশনার) স্প্রে করে যে পেটের মধ্যে যা কিছু আছে ডিগবাজী খেয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। বাসে ওঠার আগে 'এভোমিন' খেয়ে নিয়েছিলাম; মনে হচ্ছে, সেই বেচারাই এখন এই উল্টো হাঁটার নেতৃত্ব দিচ্ছে!

চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। এই এক কাজে আমি বলতে গেলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু যতবারই চোখটা লেগে আসে, অমনি বাসটা রাস্তার সাথে এক জোট হয়ে একটা ঝাকুনি মেরে ওঠে। আর যায় কোথায়, ভূড়ির ভেতর সব আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। প্রায় নতুন বাস। সিটের ভেতরে কিসব ম্যাসাজের ব্যবস্থা রেখেছে; কেমন কে জানে? দিলাম সুইচ টিপে। অদৃশ্য কে যেন পিঠের মধ্যে কিল মারা শুরু করল। আহা, কী সেই কিল! কিল খেয়েই আমি মেসেজ পেয়ে গেলাম। কথায় আছে - পেটে খেলে পিঠে সয়। পেট নিয়েই পারছিনা, আবার পিঠে খাবো!

পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, আধা ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যাত্রার প্রায় ঘন্টা ছুঁই ছুঁই, কিছুই তো ঠিক হচ্ছে না। ঘটনা কী?

ঘটনা গুরুতর! কিছুক্ষন আগে বাস কোম্পানির দেয়া শুভেচ্ছা বোতলের মিনারেল ওয়াটার খেয়েছিলাম। বজ্জাত পানির যে অশুভ ইচ্ছা ছিল, কে জানত? আমার তৃষ্ণা না মিটিয়ে সেই পানি খাদ্যনালী 'অয়েলিং' করতে করতে গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত নেমেছে। এমন 'স্মুদ' পথ পেয়ে পেটটা আর শান্ত হতে চাচ্ছেই না।

ঘটনা কদ্দূর এগোত, কে জানে; আমি কয়েক টুকরো সুপারী খেয়ে ফেললাম (আমার মা জননীকে ধন্যবাদ। উনি এ লাইনে 'প্রো'; রেকর্ডও নিট এন্ড ক্লিন নয়) সম্ভবত কাজ হলো; সাথী পেয়ে 'এভোমিন'ও মনে হয় ভরসা পেলো। কিছুক্ষন পর আমিও শান্তি পেলাম। আর কি! বিনা নোটিশে ঘুম!


(এই লেখার সচলায়তন লিঙ্ক)


2 comments:

toxoid_toxaemia said...

আমার তো ছোটকালে এভোমিন খেয়েও কাজ হতোনা। বাসে উঠলে সব উগড়ে দিতাম দূরপাল্লার যাত্রায়। এসি বাসে চড়ে কোথায় যাচ্ছিলেন ভাইয়া ? আমারো বেশি ভাল লাগেনা এসি বাস। তার চেয়ে সাধারণ বাসে চড়ে জানালা খুলে বসাতেই আমার আনন্দ বেশি। আপনার মতন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে কয়েকবার পড়বার পর এসি বাসে উঠবোনা পণ করেছি। তবে ব্যাক-ম্যাসাজার অলা এসি বাসে চড়ার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়ে ওঠেনি।

Shakil Mahmood said...

আমার প্রবলেম এসি-তে না, এসিওয়ালা বাসেই শুধু; কারন, এসি গাড়ি বা রুমে আমার ঝামেলা হয়না, আসলে ঝামেলা করে ঐ এয়ার ফ্রেশনারগুলো আর হাইওয়ের শুরুতে ঝাঁকুনিগুলো... এরপর সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সোবার ঠিকই হতে চাইছিলো না। আর ম্যাসাজারের কথা জানিনা, ঐ সময় ঐটা উপভোগ করতে পারিনি, হয়তো এতো খারাপ না!